Germany Student Visa Processing A to Z
প্রথমকাজঃ সিদ্ধান্ত জার্মানিতে আসার পড়ার ক্ষেত্রে সবার আগে যে বিষয়টা জরুরি সেটা হচ্ছে ‘সিদ্ধান্ত’। আপনি যদি একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তাহলে আপনার ৫০% কাজ শেষ। অনেকেই সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেন।
আমি এই দেরি করার পক্ষে নই। আমার মাস্তার্স শেষ হলো ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ এবং আমি জার্মানিতে আসি ২৫ মার্চ ২০১৯। আমার থেকে তিনব্যাচ চারব্যাচ সিনিয়র ভাই আপুরা এখন আসার পরিকল্পনা করছেন।
দেশে তিন-চার বছর নষ্ট না করে আগেই যদি এখানে আসার সিদ্ধান্ত নিতেন তাহলে কতো ভাল ছিলো।
সেজন্য সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তই আপনার ভবিষ্যত উজ্জ্বল করতে পারে।
অনার্স শেষ হওয়ার পরে আমি দেশে কোনো জবে আবেদন করিনাই। একটা প্ল্যান ছিলো, জার্মানিতে আসবো। এ
কেকজনের কাছে জার্মানি একেক কারণে উত্তম।
আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন আপনি কেনো হায়ার স্টাডি ডেস্টিনেশন হিসেবে জার্মানিকে বেছে নিলাম, আমার উত্তর হবেঃ
১) শিক্ষার মান। the Land of Ideas and Land of Engineers খ্যাত জার্মানি শিক্ষার মান নিয়ে আপোষ করেনা। এখানে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়।
বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে এশিয়ার ৪০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং এ ঢুকতে পারেনা সেখানে জার্মানিতে আপনি পাচ্ছেন টপর্যাংকড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ।
এখানে ভাল মানের সিঙ্গারা না, ভাল ডিগ্রী পাওয়া যায়। জার্মান ডিগ্রীর কদর বিশ্বময়।
বিজ্ঞান গবেষণার জন্য জার্মানিকে স্বর্গ বলা চলে। এপর্যন্ত ১০৩টি নোবেল জার্মানদের পকেটে ঢুকেছে যা বিশ্বে তৃতীয়।
২) নো টিউশন ফী। অন্যান্য দেশে যেখানে টিউশন ফী দিতে দিতে ছাত্ররা বেহুশ, সেখানে বিনা টিউশনে আপনি পাবেন বিশ্বমানের ডিগ্রী, কারণ বেশিরভাগ জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফী দিতে হয় না।
৩) পার্টটাইম জবের সুযোগ। এখানে ছাত্ররা সপ্তাহে ২০ ঘন্টা কাজ করার সুযোগ পান, যা দিয়ে অনায়াসে নিজের খরচ চালানো যায়, চাইলে ফেমিলিকেও সাপোর্ট দেওয়া যায়। বছরে মোটামুটি চারমাসের মতো ভ্যাকেশন পাওয়া যায়, তখন ফুলটাইম জব করা যায়।
৪) স্টাডি শেষে সুন্দর ভবিষ্যত। স্টাডি শেষ করার পর দেড় বছরের জব সার্চ ভিসা দিবে।
এই সময়ের মধ্যে একটা জব ম্যানেজ করে ফেলতে পারলে জার্মানিতে স্থায়ীভাবে থেকে যেতে পারবেন।
ভাষাগত এবং পেশাগত দক্ষতা থাকলে জবের অভাব হবেনা।
৫) স্পাউজ আনার সুযোগঃ অনেকেই জানতে চান স্পাউজ আনা যায় কি না। হ্যাঁ, রিকোয়ারমেন্টস ফিলআপ করতে পারলে আনতে পারবেন।
৬) সর্বোপরি দেশে অনিশ্চিত এবং অসম চাকরির প্রতিযোগিতা করে সময় নষ্ট করা উচিৎ বলে মনে হয় নাই।
দেশে যে লেভেলের শ্রম দেওয়ার পর একটা চাকুরি পাবো, এখানে এর থেকে আরো অনেক কম শ্রম দিয়ে অনেক অনেক বেশি সফল হওয়া যাবে।
যারা আসতে চান, বা চাননা, অথবা আসবেন কি না চিন্তা করছেন, যেই সিদ্ধান্তই নেন না কেনো, সেটি যেনো সময়োপযোগি হয়।
তবেই দেশ বদলাবে, বেকারত্বের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাবেন আপনি, উন্নত হবেন আপনি, আপনি পরিবার দেশ।
Germany Student Visa Processing A to Z
দ্বিতীয় কাজঃ প্রস্তুতি
কংরেচুলেশন্স!আপনার ৫০% কাজ শেষ কারণ, আপনি অলরেডি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন, আপনি জার্মানিতে আসতে চান। বাকি ৫০% কাজ করার জন্য এখন আপনাকে প্রস্তুতি নিতে হবে।
ব্যাচেলরে আসতে চাইলেঃ
আপনার ১৩ বছরের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে।
যেহেতু আমাদের দেশের হায়ার সেকেন্ডারি পর্যন্ত পড়তে ১২ বছর সময় লাগে সেজন্য আপনাকে বাংলাদেশের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে অথবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ যেকোনো কলেজে একবছর পড়তে হবে।
সেটার রেজাল্ট হাতে পাওয়ার পর আবেদন করতে পারবেন।
জার্মান লেঙ্গুয়েজ মিনিমাম বি২ (জার্মান মিডিয়াম কোর্সের জন্য)
একবছরের জন্য লিভিং এক্সপেন্স বাবদ ব্লকড মানি ১০২২৩ ইউরো। যেটা আপনাকে এখানে আসার পর প্রতিমাসে ৮৫২ ইউরো করে ফেরত দেওয়া হবে।
এডমিশন লেটার পাওয়ার পরে, এম্বাসি ফেস করার আগে দেখানো লাগে।
সকল একাডেমিক সার্টিফিকেতের সত্যায়িত ফটোকপি। যেকোনো নোটারি পাব্লিকের মাধ্যমে এটেস্ট করতে পারবেন।
প্রতি কপি ১০-২০ টাকা নিবে। দর কষাকষি করে নিবেন। অথবা জার্মান এম্বাসি থেকে করে নিতে পারেন।
জার্মান এম্বাসি থেকে সত্যায়িত করার লিংকঃ https://dhaka.diplo.de/bd-en/service/-/1900476
সিভিঃ ইউরোপাস সিভি আছে, ইউরোপে বেশি চলে। কিন্তু আমার কাছে ভালো লাগেনাই। আমি www.cvmkr.com থেকে সিভি বানাইসিলাম। বেশ ভালো।
মাস্টার্সে আসতে চাইলেঃ
যারা ভার্সিটির প্রথম বছরে, এবং মাস্টার্সের জন্য জার্মানি আসতে চান, তাদের উদ্যেশ্যে বলি, এখন ই এতো সিরিয়াস হওয়ার দরকার নাই ভাই, ভার্সিটিতে ভর্তি হইছেন, একটু এঞ্জয় করেন।
পড়ালেখা করে সময় নষ্ট করার দরকার নাই।
শুধু এটুক মাথায় রাখলেই হবে যে, আমি জার্মানিতে যাবো এবং একাডেমিক রেজাল্টের দিকে নজর দিলেই খালাস।
দ্বিতীয় বছর থেকে একটু আধটু শুরু করা দরকার। যেমন, ইংলিশের স্কিল ডেভেলপ করা, এটার জন্য প্রচুর মোভি দেখতে পারেন, মাঝেমাঝে ইংলিশ বই পড়লেন, ইংলিশ পত্রিকা পড়লেন।
স্পিকিং প্র্যাক্টিস শুরু করে দিতে পারেন। বিভিন্ন সেমিনারে যোগ দিতে পারেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক ট্রেইনিং হয়, করতে পারেন।
এক্সট্রা কারিকুলার একটিভিটিস যত করবেন আপনার ভেল্যু বাড়বে। ব্যাস, এটুকুনই। ও আচ্ছা, একাডেমিক রেজাল্টের কথা ভুলে গেলে চলবেনা।
তৃতীয় বছর সেই দ্বিতীয় বছরের মতোই। তবে আরেকটু রিগোরাসলি করতে হবে এই আর কি।
ইংলিশ মিডীয়ামে মাস্টার্স করলে যদিও জার্মান ভাষা লাগেনা, তবুও জার্মান ভাষা যতটুকুন পারা যায় শিখে আসা ভালো।
সাস্ট আইএমএল, ঢাবি আইএমএম, গোয়েথে ইন্সটিটিউট থেকে করে নিতে পারেন।
ফাইনাল ইয়ারে এসে আইইএলটিসের জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিতে হবে ((https://www.bessig.de/ielts আইইএলটিএস প্রস্তুতির জন্য এই লিংক ফলো করতে পারেন) ।
আর সময় নাই ভাই। এক্ষেত্রে বেশি ইফেক্টিভ হয় যদি পার্টনার পাওয়া যায়।
নিজেই প্রস্তুতি নেওয়া যায়, তবে চাইলে কোনো কোচিং এ ও ভর্তি হতে পারেন। গাইডলাইন্স পাওয়া যাবে।
অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার পরপর আরো দুইমাস ভালভাবে আইএলটিএসের প্রস্তুতি ভালভাবে নিয়ে এক্সাম দিয়ে দিলেন, যেনো অনার্সের রেজাল্ট পাওয়ার সাথেসাথেই এপলাই শুরু করে দিতে পারেন।
Germany Student Visa Processing A to Z
যা যা লাগবেঃ
ভালো সিজিপিএ। ভালো বলতে আমি বুঝি ৩+। এর থেকে যত বেশি হবে তত মঙ্গল।
তবে বিলো ৩ দিয়েও এপলাই করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়এবসাইটে দেখবেন লেখা দেখবেন ECTS 2.5 ।
এটা আমাদের ৩ এর সমান। সিজি যদি একান্তই খারাপ হয়ে যায় তাহলে আশাজাগানিয়া এই আর্টিকেল পড়ে দেখতে পারেন। https://bit.ly/31CFywv
আইইলটিস মিনিমাম ৬.৫ উইথ নো ব্যান্ড লেস দেন ৬ । তবে কিছু কোর্সে ৬ দিয়েও এপলাই করা যায়।
মোটিভেশন লেটারঃ কিছু কোর্স মোটিভেশন লেটার চায়। মোটিভেশন লেটার হচ্ছে, এই কোর্স পরে আপনি কি কি উদ্ধার করবেন সেটার লিখিত প্রতিজ্ঞা।
যে যে বিষয় উল্যেখ করবেন তা হলোঃ 1) আগে কিছুক্ষন নিজের ঢোল পিটাবেন । স্যাম্পল এবং নিয়ম দেখতে এই লিংল ফলো করুনঃ shorturl.at/amIN0
রিকোমেন্ডেশন লেটার। কিছুকিছু ভার্সিটি রিকোমেন্ডেশন লেটার চায়।
এটা হলো, আপনার ডিপার্টমেন্টের দুজন প্রফেসর থেকে লেটার নিতে হয়। উনারা লিখে দিবেন আপনি অনেক জিনিয়াস। ব্যাস। সেম্পল এবং নিয়ম দেখতে এই লিংক ফলো করুন https://bit.ly/2ZCYmcG
সিভিঃ ইউরোপাস সিভি আছে, ইউরোপে বেশি চলে। কিন্তু আমার কাছে ভালো লাগেনাই। আমি cvmkr.com থেকে সিভি বানাইসিলাম। বেশ ভালো।
সকল একাডেমিক সার্টিফিকেতের সত্যায়িত ফটোকপি। যেকোনো নোটারি পাব্লিকের মাধ্যমে এটেস্ট করতে পারবেন।
প্রতি কপি ১০-২০ টাকা নিবে। দর কষাকষি করে নিবেন।
নোটারি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লিংক ফলো করুনঃ https://www.bessig.de/…/%E0%A6%AA-%E0%A6%B0%E0%A6%B8%E0%A6%… অথবা জার্মান এম্বাসি থেকে করে নিতে পারেন।
পাসপোর্টঃ ফাইনাল ইয়ারে এসেই পাসপোর্ট করে ফেলা ভালো।
একবছরের জন্য লিভিং এক্সপেন্স বাবদ ব্লকড মানি 10223 ইউরো। যেটা আপনাকে এখানে আসার পর প্রতিমাসে 852 ইউরো করে ফেরত দেওয়া হবে। এডমিশন লেটার পাওয়ার পরে, এম্বাসি ফেস করার আগে দেখানো লাগে।
তৃতীয় কাজঃ
এই ধাপে এসে আপনার আপনার কাজ হচ্ছে সব ডকুমেন্টস গোছানো।
১) স্ক্যানিংঃ সব একাডেমিক সার্টিফিকেট, মার্কশীট এবং টেস্টিমোনিয়াল অরিজিনালগুলো স্ক্যান করে ফেলবেন।
২) এটেস্টেশনঃ সব একাডেমিক ডকুমেন্টস এবং পাসপোর্ট আইএলটিএস সার্টিফিকেট সত্যায়িত করতে হবে। দুটো অপশন আছে।
ক) জার্মান এম্বাসিতে যেতে পারেন। ফটোকপি নিয়ে যাবেন অরিজিনালের সাথে। তাদের কাছে জমা দিলে তারা ৫-৭ দিনের মধ্যে আপনার ডকুমেন্টস সত্যায়িত করে কল করবে।
খ) কোনো লইয়ারের মাধ্যমে নোটারি করে নেওয়া। আপনার জেলার কোর্টে যাবেন, গিয়ে দেখবেন কিছুকিছু লইয়ারের চেম্বারে লেখা ‘নোটারি পাবলিক, সমগ্র বাংলাদেশ’ ।
গিয়ে বলবেন সত্যায়িত করে দিতে। দরকষাকষি করবেন অবশ্যই। প্রতিকপি ১০-২০ টাকা নিবে। অবশ্যই অরিজিনাল কপি সাথে রাখবেন।
৩) কোর্স খোঁজাঃ আবেদনের সময়সীমা মাথায় রেখে কোর্স সার্চ করবেন। জার্মানিতে বছরে দুইবার আবেদন করা যায়।
ক) সামার সেমিস্টারঃ এটার ক্লাস শুরু হয় এপ্রিলে। এর জন্য আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয় আগের বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারির ১৫ তারিখ পর্যন্ত।
(ভার্সিটি টু ভার্সিটি ভ্যারি করে) যত আগে এপলাই করবেন তত ভালো।
খ) ইউন্টার সেমিস্টারঃ এটার ক্লাস শুরু হয় অকটোবরে। এর জন্য আবেদন শুরু হয় এপ্রিল থেকে জুনের ১৫ তারিখ পর্যন্ত (ভার্সিটি টু ভার্সিটি ভ্যারি করে)।
আপনার ব্যাচেলর অনুযায়ী কোর্স সার্চ করবেন। জার্মানিতে দুনিয়ার সব বিষয়ই পড়ানো হয়।
দেশে থাকতে শুনতাম জার্মানি শুধু ইঞ্জিয়ানিয়ারদের জন্য। বিগ নো।
জার্মানরাও মানুষ, সো, মানবিকের বিষয়গুলোও পড়ান হয়, এরা সামাজিকও, সো, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ থেকেও পড়তে পারবেন।
কোর্স সার্চ করবেন এই ওয়েবসাইটগুলোতে গিয়ে।
4) https://www.daad.de/…/studiena…/international-programmes/en/
Germany Student Visa Processing A to Z
৪) আপনার লেপটপে ওয়ার্ড থেকে একটি টেবিল বানান। কয়েকটি কলাম দিয়ে। যেমন, Name of Universities, Course Name, Deadline and Application Via and Requirements.
উপরোক্ত ওয়েবসাইট থেকে কি ওয়ার্ডস ধরে সার্চ দিয়ে দেখে নিবেন কি কি যোগ্যতা লাগে, আবেদনের তারিখ এবং কিসের মাধ্যমে এপলাই করতে হবে।
৫) আবেদন প্রক্রিয়াঃ জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দুটি মাধ্যমে আবেদন করা যায়।
১) https://my.uni-assist.de/ এর মাধ্যমে। এটা হচ্ছে আপনি এবং উনিভার্সিটির মধ্যকার একটি মধ্যবর্তি একটি প্রতিষ্ঠান যেটি আপনার এপ্লিকেশন যাচাইবাছাই করে আপনার ডিসায়ার্ড ইউনিভার্সিটিতে পাঠায়। এই সাইটে গিয়ে একটি একাউন্ট
খুলবেন। খোলার পর তারা ১-৩ তিন সময় নেন ভেরিফিকেশনের জন্য। একাউন্ট হয়ে গেলে আপনার ইনফো দিয়ে ব্যাসিক কোশ্চেন ফুল আপ করবেন।
আপনার সকল কাগজপত্র এই পোর্টালে আপলোড করবেন। মনে রাখবেন, আপনাকে অরিজিনাল কপির স্ক্যান্ড কপি আপলোড করতে হবে।
এপলিকেশন সাবমিট করার পর পেমেন্ট করার পর একটি পিডিএফ ক্রিয়েট হবে যেটা আপনার এপলিকেশন ফর্ম। এটা আবার পোর্টালে আপলোড করতে হবে।
এবং পরে এই এপলিকেশন ফর্মসহ আগে সত্যায়িত করে রাখা সকল ফটোকপির একসেট, আই রিপিট একসেট সেন্ড করতে হবে ইউনি-এসিস্ট এর ঠিকানায়।
মনে রাখবেন, কোনো অবস্থাতেই অরিজিনাল ডকুমেন্টস সেন্ড করবেন না। আপনাকে এপলিকেশন ফী দিতে হবে।
প্রথমটার জন্য ৭৫ ইউরো এবং পরে প্রতিটি এপলিকেশনের জন্য ৩০ ইউরো করে। ডাচবাংলা ব্যাংকের ভার্চুয়াল কার্ড অথবা ইবিএল এর একোয়া কার্ড দিয়ে পে করা যায়।
যেসব ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ আছে তাদের মাধ্যমে ব্যাংক ত্রান্সফারও করতে পারবেন। অথবা ইউরোপে কেউ পরিচিত থাকলে তার মাধ্যমে ব্যাংক ট্রান্সফার করতে পারবেন।
পে করার ৩-৫ দিনের মধ্যে পেমেন্ট কনফার্মেশন পাবেন। আবেদনের ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে তারা প্রসেস শুরু করবে এবং আবেদনের ২-৩ মাসের মধ্যে এডমিশন লেটার পাবেন।
খ) ডিরেক্ট এপলিকেশনঃ
কিছুকিছু ইউনিভার্সিটি আছে যাদের এপলিকেশন ইউনি-এসিস্ট রেগুলেট করেনা। এক্ষত্রে আপনাকে ডিরেক্ট তাদের এপলিকেশন পোর্টালে গিয়ে আবেদন করতে হবে।
কেউ হার্ড কপি চায় আবার কেউ চায় না। কেউ অরিজিনাল আপলোড করতে বলে আবার কেউ সত্যায়িত কপি আপলোড করতে বলে।
ডিপেন্ডস অন ইউনি। তবে, সুখবর হলো, ডিরেক্ট এপলিকেশনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এপলিকেশন ফী দেওয়া লাগেনা।
ব্যাস, আজ এই পর্যন্তই। আবেদন করে ২-৩ মাস আরাম করেন, কিছু নাটক মোভি দেখতে পারেন।
চতুর্থ কাজঃ ভিসা এপলিকেশন
কংরেচুলেশন্স! আপনাকে কংরেচুলেইট করলাম এজন্য যে, আপনি ইতমধ্যে অফার লেটার পেয়ে গেছেন। সো, এই ধাপটি আপনার জন্য যদি আপনি কোনো জার্মান ইউনিভার্সিটি থেকে অফার লেটার পেয়ে থাকেন।
এই ধাপের কাজ খুবই সতর্কতার সাথে করতে হবে এবং কোনো অবস্থাতেই সময় নষ্ট করা যাবেনা। আপনাকে প্রচুর দৌড়ানো লাগবে।
কাজ ১ ঃ প্রথমেই আপনাকে যে কাজটি করতে হবে সেটা হলো, অফার লেটার এক্সেপ্ট করা।
কিছু ভার্সিটির অফার লেটার নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে এক্সেপ্ট করতে হয়। কিছু ভার্সিটি সেমিস্টার ফী দিয়ে দিতে বলে। ইন্সট্রাকশন ফলো করবেন।
কাজ ২ ঃ ভিসা এপলিকেশনের জন্য এম্বাসি থেকে এপয়েন্টমেন্ট নেওয়া। এনরোলমেন্ট ডেইট মাথায় রেখে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিবেন। ভিসা ইস্যু করতে কমবেশি একমাস সময় লাগে।
এপয়েন্টমেন্টলিঙ্কঃ https://service2.diplo.de/rkter…/extern/choose_realmList.do…
যেকোনো প্রয়োজনে মেইল করবেন এখানেঃ https://dhaka.diplo.de/bd-en/service/kontakt-formular
কাজ ৩ঃ তৃতীয় কাজটি করতে একদমই লেইট করা যাবেনা, সেটা হচ্ছে ডর্ম/বাসার জন্য এপলাই করা। মনে রাখবেন, জার্মানিতে ভিসা পাওয়া থেকে বাসা পাওয়া কঠিন।
ভয়ের কারণ নেই, সবই ম্যানেজ হয়ে যায় একটা সময়। বাসার জন্য আবেদন করবেন এই সাইটগুলোতে গিয়ে।
১) Studentenwerk Berlin, Studentenwerk Potsdam সহ Studentenwerk লিখে আপনি যে সিটিতে যাবেন সে সিটির নাম লিখে গুগলে সার্চ দিবেন।
https://www.studentenwerk-potsdam.de/ , https://stw.berlin/en
২) Studentdorf Berlin, Studentdorf Potsdam সহ Studentdorf লিখে আপনি যে সিটিতে যাবেন সে সিটির নাম লিখে গুগলে সার্চ দিবেন।
৩) WG Berlin, WG Potsdam আগের মতোই ফলো করবেন।
৪) পরিচিত কেউ থাকলে তার মাধ্যমে খোজ নেওয়া।
Germany Student Visa Processing A to Z
কাজ ৪ ঃ Fintiba অথবা Deutsche Bank ব্লক একাউন্ট খোলা। আমার কাছে ফিনতিবাকেই বেস্ট মনে হইছে। দশমিনিটে একাউন্ট হয়ে যাবে।
শুধু পাসপোর্টের সাথে আপনার একটা সেলফি তোলে আপলোড দিবেন। ১-২ ভেরিফিকেশল চলবে। পরে একাউন্ট একটিভেট হয়ে যাবে।
ফিন্তিবায় দুইটা স্কিম আছে, একটা ফিন্তিবা ব্যাসিক, আরেকটা ফিন্তিবা প্লাস(হেলথ ইস্নুরেন্স সহ)। আমার প্রিফারেন্স ফিন্তিবা ব্যাসিক। লিংক https://www.fintiba.com/
কাজ ৫ঃ স্টুডেন্ট ফাইল ওপেন করা। ফরেন এক্সচেঞ্জ আছে এমন এমন কোনো ব্যাংকে গিয়ে স্টুডেন্ট ফাইল ওপেন করবেন।সোনালি, ইবিএল, ডাচবাংলা, সিটি ব্যাংক, কমার্সিয়াল ব্যাংক অব সিলন(এটা থেকে আমি করেছি) ইত্যাদি যেকোনোটায় করতে পারেন।
ফাইল ওপেন করতে যা যা লাগবে।
১) নিজের ৫-৭ কপি ছবি
২) একজন নমিনি এবং নমিনির ছবি। (নমিনিকে সাথে নিয়ে ব্যাংকে যাবেন)
৩) পাসপোর্টের ফটোকপি
৪) অফার লেটার
৫) সকল একাডেমিক সার্টিফিকেটের ফটোকপি ২ সেট
৬) ফিন্যান্সারের ব্যাংকডিটেইলস (চাইতে পারে, নাও পারে)
৭) ফিনতিবার রিফান্ড পলিসি। আপনার ফিন্তিবা একাউন্ট হয়ে ১৩ পেজের একটা রিফান্ড পলিসি ক্রিয়েট হবে, ডাউনলোড করে নিবন।
৮) আইইএলটিএসের ফটোকপি।
কাজ ৬ ঃ ফিন্তিবায় টাকা সেন্ড করা। স্টুডেন্ট ফাইল ওপেন করার সময় যে একাউন্ট করেছিলেন ওই একাউন্তে ১০২২৩ ইউরো সমপরিমান টাকা রাখবেন।
এরপর জার্মানিতে টাকা সেন্ড করতে কি কি করা লাগবে তারাই বলে দিবে। ফিনতিবায় টাকা পাঠানর ৩-৬ দিনের মধ্যে কনফার্মেশন পেয়ে যাবেন।
এটা ডাউনলোড করে নিবেন। ভিসা ইন্টারভিয়ের সময় লাগবে। যদি ভিসা ঈন্টারভিউয়ের আগে টাকা ম্যানেজ না করতে পারেন, সমস্যা নাই।
ব্লকিং কনফার্মেশন ইন্টারভিউয়ের পরেও জমা দিতে পারবেন। ইন্টারভিউয়ের দিন আপনাকে সময় দিবে ১৫-২০ দিনের। এর মধ্যে ব্লকিং কনফার্মেশন এম্বাসিতে গিয়ে জমা দিতে হবে।
ভিসা ইন্টারভিউ দেওয়ার পর যে গেইট গিয়ে বের হয়েছিলেন ওই গেইটে গিয়ে মিসিং ডমুকেন্টস জমা দিতে হয়।
ভিসা ইন্টারভিউয়ের দিন আপনাকে একটা পাসপোর্ট কালেকশন রিসিপ্ট দিবে। এটা যেনো কোনো অবস্থাতেই না হারায়।
মিসিং ডকুমেন্টস জমা দেওয়ার সময় পাসপোর্ট কালেকশন রিসিপ্ট এর একটা কপিও দিবেন। এবং খামের উপরে পাসপোর্ট কালেকশন রিসিপ্টএ দেওয়া নাম্বার লিখে দিবেন।
Germany Student Visa Processing A to Z
কাজ ৭ ঃ ট্রাভেল হেলথ ইন্সুরেন্স। জার্মান ভিসা এপলিকেশনের জন্য ট্রাভেল হেলথ ইন্সুরেন্স বাধ্যতামূলক।
আপনি যেদিন ফ্লাই করতে চান, সেদিন থেকে মিনিমাম ১৪ দিনের ইন্সুরেন্স করতে হবে। ১৫০০-৪০০০ টাকা লাগে। এম্বাসি অনুমোদিত ইন্সুরেন্স কোমানির তালিকা পাবেন এখানে।
https://dhaka.diplo.de/…/2017-krankenversicherungenliste-da…
কাজ ৮ঃ ভিসা এপলিকেশন ফর্ম পুরণ করা। এটা আহামরি কিছু না। ব্যাসিক ইনফো দিবেন। জার্মান এড্রেস দিবেন আপনার ভার্সিটি/ডর্ম এর। হোটেল বুকিং এর ঝামেলায় যাওয়ার দরকার নাইই। তিনটি সিগ্নেচারের জায়গা আছে, সবগুলোই আপনার।
ফর্ম পুরন করার নিয়ম পাবেন এখানে। https://www.facebook.com/download/preview/658830244555537 এটা ডাউনলোড করে এডিট করে নিজের ইনফো দিয়ে দিবেন জাস্ট।
কাজ ৯ ঃ ভিসা ইন্টারভিউ এর জন্য ডকুমেন্টস এরেঞ্জ করা।
যা যা লাগবেঃ
১) এপলিকেশন ফর্ম
২) পাসপোর্ট
৩) সকল একাডেমিক সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্ট
৪) আইইএলটিস
৫) ট্রাভেল হেলথ ইন্সুরেন্স
৬) সদ্যতোলা তিনকপি কপি বায়োমেট্রিক ছবি। বায়োমেট্রিক ছবি বলতে ব্যাকগ্রাউন্ড হবে সাদা এবং সাইজ হবে ৩৫*৪৫।
৭) অফার লেটার
৮) ব্লকিং কনফার্মেশন/ব্লক একাউন্ট অপেনিং কনফার্মেশন।
উপরের সব ডকুমেন্টস ২ সেট ফটোকপি করে নিবেন A4 কাগজে, আই রিপিট A4 কাগজে। চেকলিস্ট পাবেন এখানেঃ
https://dhaka.diplo.de/…/checklist-students-jan2019-data.pdf
ফটোকপি সত্যায়িত করতে হয় না। সো, দুইসেট ফটোকপি এবং একসেট অরিজিনাল নিয়ে চলে যাবেন এম্বাসিতে ইন্টারভিউ
দিতে।
কাজ ১০ঃ ভিসা ইন্টারভিউ। ফাইনাল ডে চলে আসলো। আপনি আজকে ভিসা ঈন্টারভিউ দিবেন।
ভয়ের কোনো কারণ নেই। ইন্টারভিউ শুধুই ফর্মালিটি। কি কি জিজ্ঞস করে, এটা নিয়ে পরে লেখবো।
চাইলে আপনার ফ্রেন্ড নিয়ে এম্বাসিতে যেতে পারবেন, কিন্তু ফ্রেন্ডকে বাইরে অপেক্ষা করতে হবে।
ভেতরে যাওয়ার সুযোগ নেই। নির্দিষ্ট সময়ের ত্রিশমিনিট আগেই চলে যাবেন। এপয়েন্টমেন্ট মেইল প্রিন্ট করে নিয়ে যাবেন।
আসার পরে লম্বা একটা ঘুম দিবেন। ফেমিলিকে সময় দিবেন, কারণ আপনি আর বেশিদিন দেশি নাই।
ভিসা ইন্টারভিউ এর স্যাম্পল কোশ্চেন এবং এন্সার পাবেন এই লিংকেঃ shorturl.at/jyHNS
গুড লাক।
লিখেছেনঃ কফিল মাহমুদ
ন্যাশনাল এন্ড ইন্টারনেশনাল এডমিনিস্ট্রেশন, ইউনিভার্সিটি অব পোস্টডাম, জার্মানি।